Translate

শনিবার, ৪ মে, ২০১৯

কেয়ামতের দিন সবকিছু ধ্বংশ হলেও বাংলাদেশ কিন্তু ধ্বংশ হবে না!

কি এমন শিরোনামে চোখ কপালে উঠলো। কমেন্ট বক্সে লিখবেন- বেইমান, কাফের, মুনাফিক, মুরতাদ, ভন্ড ইত্যাদি, ইত্যাদি!
আসুন এবার হাতে নাতে প্রমাণ দেই।

আমরা জানি, মহান আল্লাহ তায়ালা এই সৃষ্টিজগত ১০ ই মহরম তারিখে সৃষ্টি করেছেন, আবার ১০ই মহরম ধ্বংশ করবেন। আর সেই দিনটি হবে শুক্রবার। জন্মের পর থেকে আমরা সবাই এই কথা শুনে ও মেনে আসছি।

কিন্তু বাংলাদেশের বিরাট একটি মুসলমান দল বা গোষ্ঠীর ধারণা পৃথিবীতে কিয়ামত হলেও বাংলাদেশের কিছুই হবে না। তারা সারাবিশ্বের কিয়ামতের লাইভ ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে দেখতে পাবেন!

ভাবছেন আজে বাজে কি যা তা বলছি!
আরে না ভাই, এই কথাটার সাথে আপনি নিজেও তো একমত। কিভাবে???

তাহলে দয়া করে বুঝে বুঝে পড়ুন,

১০ ই মহরম শুক্রবার কেয়ামতের পূর্বে মহান আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী ধ্বংশ করার জন্য হযরত ইস্রাফিল (আ:) কে শিঙ্গায় ফুক দিতে আদেশ করবেন। আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী ইস্রাফিল (আ:) পৃথিবী ধ্বংশ করার জন্য শিঙ্গায় ফুক দেওয়ার প্রস্তুতি নিবেন।

কিন্তু ফুক দেওয়ার পূর্বেই ইস্রাফিল (আ:) আল্লাহকে বলবেন: আমি কি বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে কেয়ামত ঘটাবো?

আল্লাহ বলবেন -কেন?

ইস্রাফিল (আ:) বলবেন- আজ সারা পৃথিবীতে চলে ১০ই মহরম শুক্রবার, কিন্তু শুধুমাত্র #বাংলাদেশে চলে ৯ই মহরম শুক্রবার। তাহলে আজ তো বাংলাদেশ ধ্বংশ করা যাবে না। ৯ তারিখে তো কিয়ামত হবে না।

আল্লাহ বলবেন- ঠিক আছে তাহলে আজ বাংলাদেশ ধ্বংশ করা লাগবে না আগামীকাল করো। আগামীকাল ১০ তারিখ হবে!

ইস্রাফিল (আ:) আবার বলবে- আল্লাহ কালতো বাংলাদেশে ১০ তারিখ হবে ঠিকই কিন্ত বার তো হবে শনিবার। শনিবারে তো ধ্বংশ করার নিয়ম নেই।

আল্লাহ বলবেন: ঠিক আছে তাহলে অাগামীতে বাংলাদেশে যে বছর ১০ ই মহরম শুক্রবার হয় সেদিনই বাংলাদেশ ধ্বংশ করো।

আজ বাংলাদেশ বাদে সারা দুনিয়া ধ্বংশ করো! কেননা আজ বাংলাদেশ বাদে সারাবিশ্বেই ১০ ই মহরম শুক্রবার!

( বি: দ্র: উপরের আল্লাহর সাথে ইস্রাফিলের কথোপকথন সম্পূর্ণ কাল্পনিক যাহা আপনাকে বোঝানোর জন্য লিখা হয়েছে। আসলেই কি বাস্তবের ঘটনা এই রকমই হবে?)

না তা মোটেও হবে না, কেননা সারা পৃথিবী একই সাথেই ধ্বংশ হবে, বাংলাদেশ অন্য বছর ধ্বংশ হবে না। তাহলে আরবী তারিখ সারাবিশ্বে একরকম হওয়া প্রয়োজন।

এবার আসুন আসল কথায়-
আমরা প্রতিবছর সৌদির চেয়ে ১ দিন পর ঈদ করি। সৌদির ১ তারিখ হলে বাংলাদেশে চলে ২৯ বা ৩০ তারিখ। যাহা আমরা সাদরে মেনে নেই।

অথচ সৌদির চেয়ে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য মাত্র ৩ ঘন্টা। কিন্তু এই ৩ ঘন্টার জন্য জুমার নামাজ তো #শনিবারে পড়ি না। জুমার নামাজ তো ৩ ঘন্টার ব্যবধানে শুক্রবারেই পড়ি। তবে কেন ঈদের নামাজ ১ দিন পর পড়বো।

কোন কোন বছর দেখা যায়, সৌদিতে শুক্রবারে ঈদের নামাজ ও জুমার নামাজ একই দিনে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশের মুসলমানরা শুধু মাত্র জুমার নামাজ পড়ি কিন্তু ঈদের নামাজ পড়ি না। ঈদের নামাজ পড়ি একদিন পর অর্থাৎ শনিবার।

আমার প্রশ্ন হে আলেম ভাইয়েরা, আপনার ৩ ঘন্টার ব্যবধানে জুমার নামাজ পড়তে পারলে ঈদের নামাজ কেন একদিন পর অর্থাৎ ২১ ঘন্টা পর পড়বেন? এটা কি ভুল নয়। একই ক্ষেত্রে ২ নীতি নয়? আর আমরাও সাধারণ মুসল্লিরা আলেমদের সাথে তাল মিলিয়ে বিরাট ভুলটি করে যাচ্ছি কি?

বলবেন বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখা যায়নি। যদি তাই হয় তবে, আপনার দেশের সাথে সৌদির জুম্মার নামাজ একদিনে হয় কিভাবে? তারিখ একদিন পিছালে তো বারও একদিন পিছানোর কথা। তবে জুমার নামাজটা শনিবারেই পড়তেন।

এখনও কি সমস্যাটা ধরতে পারেন নাই? যদি সমস্যা ধরতে না পারেন তবে পুনরায় পড়ুন।

এবার সমাধান কি? মনে করুন বাংলাদেশ, ভারত, সৌদি তিনটা মিলে একটা দেশ। রাজধানী মদিনা। একটি রমজানের ক্যালেন্ডার ছাপানো হলো একটি সেক্ষেত্রে আগে বাংলাদেশে সূর্য ডুববে। প্রথমে বাঙালিরা ইফতার করবে। এরপর আধা ঘন্টা পর ভারতের মানুষ ইফতার করে, এরপর মদিনায় সন্ধা হলে তারাও ইফতার করবে। এরপর সৌদি চাঁদ দেখা গেলে সবাই (বাংলাদেশ, ভারত, সৌদি) পরদিন ঈদ করবে।

ভাবছেন মনগড়া বলছি, বিষয়টা তা নয়। বাংলাদেশে এই পদ্ধতিই পরিচালিত হচ্ছে। যেমন সিলেটের মানুষ ঢাকার ৭ মিনিট আগে ইফতার করে। এরপর ঢাকার মানুষ ইফতার করে ও এরপর ঢাকার ৯ মিনিট পর রাজশাহীর মানুষ ইফতার করে।

এখন সারাদেশে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারনে শুধু মাত্র রাজশাহী জেলার বাঘা থেকে চাঁদ দেখা গেল। তাহলে কি সিলেট ও ঢাকার মানুষ ঈদ করেনা? অবশ্যই করে।

তবে সৌদি চাঁদ উঠলে আমাদের ঈদ করতে সমস্যা কোথায়।

পাকিস্তান আমলে এদেশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান সেক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের কোথাও চাঁদ দেখা গেলে দুই দেশেই একই দিনে ঈদ হতো।

মহান আল্লাহ তায়ালা আল কোরআনে বলেন: তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। কিন্তু আজ আমরা আল্লাহর ভুখন্ড টুকরো টুকরো করে ছোট ছোট দেশ তৈরি করে, আমার দেশে চাঁদ দেখা যায় নাই বলে ধর্মীয় অনুষ্ঠান বিলম্বে করে সরাসরি আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে চলছি না কি?

তাই আসুন পৃথিবীর যেকোন দেশে চাঁদ দেখার গেলে আমরাও মুসলিম ঐক্য বজায় রাখতে একই দিনে ও একই বারে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে মহান আল্লাহর নির্দেশ পালন করি। আর তাহলেই একমাত্র একই দিনে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার কথাটাও যুক্তিযুক্ত হবে। নচেৎ নয়।

(বি:দ্র: মহান আল্লাহ তায়ালা ও ইস্রাফিল (আ:) এর ঘটনাটি প্রকৃত পক্ষে এমন নয় শুধুমাত্র অালোচ্য বিষয়টি ভালভাবে বোঝানোর জন্য রূপ দেয়া হয়েছে)

দয়াময় প্রভু তার প্রিয় বন্ধুর বরকতে যেন দ্রুত সারাবিশ্বে একই সাথে ঈদ করে মুসলিম ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা করে দেন। আমিন।।