Translate

বৃহস্পতিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮

বীর উত্তম এম. আজিজুর রহমান- বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ানবাগী হুজুর সম্পর্কে মূল্যবান অভিমত দিলেন


('মুক্তিযুদ্ধে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী' পুস্তকে অত্যন্ত মূল্যবান অভিমত দিলেন মেজর জেনারেল (অবঃ) এম অাজিজুর রহমান বীর উত্তম। নিচে তা হুবুহু তুলে ধরা হলো।)

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রখ্যাত ধর্মীয় ও অাধ্যাত্মিক নেতা সূফী সম্রাট হযরত মাহবুব এ খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলার প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ঘটনাবলীকে নিয়ে রচিত 'মুক্তিযুদ্ধে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী' গ্রন্থটি পাঠ করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। ইতিপূর্বে মুক্তিযুদ্ধের উপর প্রকাশিত বিভিন্ন গ্রন্থের লেখকগণকে এক এক দৃষ্টিভঙ্গিতে লিখতে দেখেছি। কিন্তু এ গ্রন্থে দেওয়ানবাগী হুজুরের অনবদ্য অবদানের পাশাপাশি স্বাধীনতা যুদ্ধে পটভূমি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত বিজয় পযর্ন্ত রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহকে সামগ্রিকভাবে অতি সংক্ষেপে প্রান্জল ভাষায় অনেক দূর্লভ ছবিসহ এত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা পাঠক মাত্রই বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের অভ্যূদয় সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা লাভ করবেন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একজন সহযোদ্ধা হিসেবে দেখেছি, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর সর্বোপরি একজন ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব। এদেশের আলেম সমাজ যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছেন, তখন তিনি দেশ ও জাতিকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে উদ্ধার করার জন্য সহপাঠীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আমার জানা মতে হয়তো তিনিই একমাত্র আলেম বীর মুক্তিযোদ্ধা, যিনি ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন।

সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর সব সময়ই শান্তির পক্ষে ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে যেমন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, তেমনি স্বাধীনতা লাভের পর হতে এখন পর্যন্ত তিনি মানুষের ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক জীবনে, সামাজিক জীবনে ও জাতীয় জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট রয়েছেন। মানবতাবাদী এই মহামানবের অসাধারণ চারিত্রিক গুনাবলীকে এক কথায় অনবদ্য বলা যায়। আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুরের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। সেই সাথে স্বাধীনতা যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জাতিকে জানানোর জন্য 'মুক্তিযুদ্ধে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী' গ্রন্থটির বহুল প্রচারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছি।

এম আজিজুর রহমান- বীর উত্তম

মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া (অব) বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ানবাগী হুজুর সম্পর্কে মূল্যবান মতামত দেন


'মুক্তিযুদ্ধে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী' গ্রন্থে প্রখ্যাত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, চেয়ারম্যান এন্ড চীফ রিসার্চার- সেন্টার ফর বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ, মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া (অবঃ) এর অভিমত নিচে দেওয়া হলো।

একাত্তরের ২০শে নভেম্বর শনিবার ছিল ঈদুল ফিতর। পাকিস্তানি পশুশ্রেণীর সেনাবাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীদের অত্যাচার ও নির্যাতনে মানুষ প্রায় সহায়হীন। গোটা বাংলাদেশ তখন অবরুদ্ধ। ইতর গোত্রীয় এ দালালের অনেকেই ছিল বর্ণচোরা। গায়ে সাইনবোর্ড না থাকলেও এরা সাইনবোর্ডওয়ালা দালালদের চেয়েও জঘন্য ছিল। অবাক হতে হয় ভেবে তাদের অনেকেই ছিল স্কুলের শিক্ষক ও সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি। এদের ভয়ে রেডিওতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শুনতে হতো নিচু ভল্যুয়মে; মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা আর স্বাধীনতার কথা বলতে হতো এদিক ওদিক তাকিয়ে নিচুস্বরে।

ঈদের জামাতে ইমাম সাহেব সব শ্রেনীর মানুষের আর্জি মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে উপস্থাপন করেন। মোনাজাত হয় সাধারণ মোনাজাতের চেয়ে দীর্ঘ। কিন্তু একাত্তরের ঈদুল ফিতর ছিল একদমই ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের। এমন ঈদ অতীতে কখনো হয়নি, ভবিষ্যতেও কোনদিন হবে না.....।

এস ফোর্স বিগ্রেড ২য় এবং ১১তম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের যেসব অফিসার এবং সৈনিক সেসময় যুদ্ধে ছিলেন না এবং সেক্টর সদর দপ্তরে উপস্থিত ছিলেন তারা জামাতের আয়োজন করেন। ইমামতি করেন ২য় ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা মাহবুব এ খোদা। নামাজ শেষে ইমাম সাহেব অত্যন্ত আবেগময় এক মোনাজাত করেন। নামাজিরা কাদঁতে কাদঁতে এক পর্যায়ে মাটিতে গড়াতে থাকেন। ইমাম সাহেব মোনাজাতের এক পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করেন ঈদুল আযহার (কোরবানীর ঈদ) জামাত যেন স্বাধীন বাংলাদেশের রেইসকোর্স ময়দানে পড়তে পারেন।আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই দোয়া কবুল করেছিলেন।

বিজয়ের প্রাক্কালে এস ফোর্সের কমান্ডার লে. কর্ণেল কাজী মোহাম্মদ শফিউল্লাহ, ২য় ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টসহ ঢাকা প্রবেশ করেন। ২য় ইষ্ট বেঙ্গল ঢাকা প্রবেশ করে দুই দিন ঢাকা স্টেডিয়ামে কাটিয়ে রমনা রেসকোর্স (বর্তমানে সরওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে আশ্রয় নেন। তখনো ভারতীয় বাহিনী ঢাকা সেনানিবাসে আমাদের প্রবেশাধিকার দেয়নি। এরই মধ্যে অাসে ঈদুল আযহা বা কোরবাণীর ঈদ। আল্লাহর অপার মহিমা! যেন ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা মাহবুব এ খোদার দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করেছিলেন। তিনিই রেসকোর্স ময়দানে ঈদুল আযহার নামাজে ইমামতি করেন।

সোমবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

বাংলাদেশের ১ম সেনাবাহিনীর প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ানবাগী হুজুর সম্পর্কে মূল্যবান অভিমতে যা বললেন


(বাংলাদেশের ১ম সেনাবাহিনীর প্রধান, সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রদূত, মুক্তিযুদ্ধের ৩ নং সেক্টর ও 'এস' ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহ বীর উত্তম (অবঃ)- সম্প্রতি সূফী সম্রাট মাহবুব এ খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলার মুক্তিযুদ্ধে দিনগুলো নিয়ে 'মুক্তিযুদ্ধে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী' বইটির পান্ডুলিপি পড়ে তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মূল্যবান অভিমত দিয়ে বলেনঃ)

'মুক্তিযুদ্ধে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী' বইটি পড়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সব কথাই স্মৃতিতে ভেসে উঠেছিল। যুদ্ধকালীন সময়ে আমি আমার সেক্টরে যে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করেছিলাম, সেই ক্যাম্প থেকেই সূফী সম্রাট হযরত মাহবুব এ খোদা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

আমার সেক্টরে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত যোদ্ধা ছিল প্রায় ৩০ হাজারের উপর। তাদের সবার কথা মনে রাখা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়, যদি না সে ব্যক্তির সাধারণের চেয়ে কিছু অসাধারণ কাজকর্ম পরিলক্ষিত হয়। সূফী সম্রাট মাহবুব এ খোদা হযরত দেওয়ানবাগী ছিলেন তেমনই এক ব্যক্তি।

তাঁর কার্যক্রম প্রথমে আমার নজরে অাসে ধর্মগড় অপারেশনে। সেই অপারেশনে তাঁর বীরত্বের কারণে অামি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। পরবর্তীতে তিনি শুধু যুদ্ধই করেননি, তিনি আমার সেক্টরের অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে অনুপ্রাণিত করেছেন। নামাজের সময় তাঁর বয়ান এতই শ্রুতিমধুর ছিল যে, তা শুনতে ইচ্ছে করত। মুক্তিযুদ্ধের প্রায় শেষ প্রান্তে আমার হেড কোয়ার্টার হেজামারাতে রোজার ঈদের (ঈদুল ফিতর) নামাজের খুৎবা এবং মুনাজাত এমনই প্রাণবন্ত ছিল যে, সেদিন জামায়াতে এমন কোন লোক ছিল না, যে কাঁদে নাই। সেদিন হুজুর সবারই মন কেড়ে নিয়েছিলেন এবং দোয়া করেছিলেন যে- আল্লাহ আমরা যেন ঈদুল আজহার নামাজ রেইস কোর্স ময়দানে পড়তে পারি। হয়েছিলও তাই। আমরা ঈদুল আজহার নামাজ রেইস কোর্স ময়দানেই পড়েছিলাম।

যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমি তাঁকে একটি নতুন ব্যাটালিয়নের (১৬ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে ধর্ম প্রচারে তিনি অাত্মনিয়োগ করেন। বর্তমানে তিনি একজন সফল ধর্ম প্রচারক। আল্লাহ তাঁকে হেফাজত করুক।