রামদেব ও অজয় পাল প্রমুখ বিশিষ্ট লােকগণ ইসলাম গ্রহণ করার ফলে আজমীরের হিন্দুগণ মুসলমানদের উপর অত্যধিক ক্ষুব্ধ হইয়া উঠল ও চরমভাবে ক্ষেপে গেল। তারা মুসলমানদের আনা সাগর হতে পানি নিতে ও আনা সাগরের তীর দিয়ে চলাফেরা করতে বাধাদান করতে লাগল।
একদিন খাজা সাহেবের জনৈক সহচর দেব মন্দিরের নিকটবর্তী রাস্তা দিয়ে যাবার সময় পূজারী ব্রাহ্মণগণ তাহাকে যথেষ্ট অপমান ও অপদস্থ করলেন। অতঃপর তিনি খাজা সাহেবকে এ অপমানের কথা জানালেন। খাজা সাহেব কোনরূপ মন্তব্য না করে নিজেই একা গিয়ে মন্দিরের সামনে উপস্থিত হলেন ।পূজারীগণ মুসলমানদের আন্তরিকভাবে ঘৃণা ও শত্রু মনে করলেও খাজা সাহেবকে কেউ কিছু বলিতে সাহস পাইল না। কারণ এ পর্যন্ত তার দ্বারা সংঘটিত কার্যকলাপগুলি প্রত্যক্ষ করে তারা সকলেই তাকে অত্যন্ত ভয় করতেছিল।
হযরত খাজা সাহেব মন্দিরের নিকট উপস্থিত হইয়া পূজারী ব্রাহ্মণদের বললেন, তােমরা তােমাদের সৃষ্টিকর্তাকে ছেড়ে নিজের হাতে নির্মিত মূর্তির পূজা কর কেন? তারা উত্তরে বলে, আমরা এদের পরম আরাধ্য সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর বলেই পূজা করি। খাজা সাহেব বললেন, যদি তােমরা সত্য সত্যই তােমাদের উপাস্য সৃষ্টিকর্তা বলে বিশ্বাস কর এবং ইহা যদি সত্যই তােমাদের উপাস্য হয়ে থাকে তাহলে এদের নিকট কিছু প্রার্থনা কর। যদি তারা দিতে সক্ষম হয়, তবে বুঝবে যে, সত্যই ইহা উপসনার যােগ্য। ব্রাহ্মণগণ বলল, এরা প্রকাশ্যভাবে কারও কোন প্রার্থনা পূরণ করে না। যেমন আপনারা যার নাম নিয়ে আযান দেন, যার জন্য নামায পড়েন, আপনাদের প্রতি তারা প্রকাশ্যে কোন সাহায্য বা সহযােগিতার প্রমাণ দেখাতে পারেন। যদি পারেন তবে আমাদেরকে তার প্রমাণ দেখান। হযরত খাজা সাহেব বললেন, এইরূপ প্রমাণ বহুত আছে, প্রয়ােজনে তা অবশ্যই দেখাতে পারি। তবে তার পূর্বে আমাদের ধর্ম কিরূপ সত্য ও আমাদের উপাস্য সৃষ্টিকর্তা কতবড় শক্তিশালী তার প্রমাণ দেখ। অতঃপর তিনি মন্দিরের প্রধান দেবমূর্তিকে আহ্বান করিয়া বললেন, যদি আমার ধর্ম ইসলাম এবং আমার প্রতিপালক আল্লাহ ও আমার রাসূল সত্য হন তবে তুমি আমার আল্লাহর আদেশে তাহাদের সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান কর। আল্লাহ তায়ালার কি অপূর্ব মহিমা তৎক্ষণাৎ প্রস্তর মূর্তিটি বাকশক্তি লাভ করে স্বস্থান হতে একটু অগ্রসর হয়ে এসে বলে উঠলো, আপনার ধর্ম ইসলাম এবং আপনার উপাস্য আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল পরম সত্য এবং আপনি সত্যিই আল্লাহর আদেশে এই স্থানে সত্য ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে আগমন করেছেন। আমি সত্য সত্য সাক্ষ্য দিচ্ছি ‘ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ' অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপাস্য নাই এবং হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তাঁহার প্রেরিত পুরুষ। আর আমি ইহাও সাক্ষ্য দিতেছি যে, আমার উপাসকগণের ধর্ম মিথ্যা ব্যতিত কিছুই না। নিজেদের উপাস্য দেবমূর্তির মুখে এরূপ বাক্য শুনিয়া পূজারী পুরােহিতগণসহ উপস্থিত সকল হিন্দুগন বিস্মিত হইল এবং তারা ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিল। কথিত আছে এই কারামতি দেখে ঐ গ্রামের প্রায় ১৪০০ হিন্দু মুসলমান হয়ে গিয়েছিল।