সিঙ্গাপুরে তখনকার বড় বড় কয়েকজন ডাক্তারকে দেখালে সেখানকার ব্যয়বহুল চিকিৎসায় প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হতে থাকে। কিন্তু রােগ - যন্ত্রণার কোন উপশম হলাে না। ডাক্তাররা সঠিক রােগটি কি তাও বুঝতে পারছিল না। এদিকে ব্যয়বহুল চিকিৎসা ও ঠিক মতাে কাজ করতে না পারায় তার জমানো অর্থও শেষ হয়ে আসে। সে কোন উপায় না দেখে দেশে ফোন করে পরিবারকে জানালে তারা বিভিন্ন ডাক্তার - কবিরাজের পরামর্শমত ঔষধ সিঙ্গাপুরে পাঠায়। কিন্তু সেগুলােতেও কোনো কাজ হয় না। তখন তার মন অলী - আল্লাহগণের প্রতি ঝুঁকে যায়। সে তার মাকে বলে অলী - আল্লাহর দরবারে যেতে। তারা বহু দরবারে ঘুরে মানত দেয়। এমনকি ইব্রাহীমপুর এতিমখানায় তার বাবা - মা ও স্ত্রী আলাদাভাবে গরু দেয় কিন্তু কোন লাভ হয় না।
অবশেষে উপায় না দেখে সে দেশে ফেরত আসে। এরপর নিজেই বিভিন্ন ডাক্তার কবিরাজের শরণাপন্ন হন। এভাবে ৪ বছর মারাত্মক যন্ত্রণা ও কষ্টের অভিশাপ সহ্য করেন। এরপর ঢাকা হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চর্মরােগ বিশেষজ্ঞ এম. কবীর চৌধুরীকে দেখালে দেহের বিভিন্ন স্থান থেকে পচা মাংস কেটে নিয়ে পরীক্ষা করেন। তিনি রােগের নাম বলেন, গাটেট সরিয়াসিস। এ রােগটি বংশগত তার দাদারও এমন হতাে, যা কখনাে সম্পূর্ণ ভালাে হয় না, দমিয়ে রাখা যায়। তিনি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ খেলে রােগটি স্থির থাকে, যন্ত্রণা কমে কিন্তু ঔষধ বন্ধ করলে আবার বাড়তে থাকে। প্রতিদিন দেড়শ' থেকে দুইশ' টাকার ঔষধ খেতে হয়, কোনো কাজ কর্মও করতে পারেননা। এমতাবস্থায় চরম আর্থিক সংকটে পড়েন।
২০০৪ সালের দিকে তার চাচাতাে ভাইয়ের কাছে যুগশ্রেষ্ঠ মহামানব সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা সম্পর্কে জানতে পারেন এবং তার পাক কদমে তরিকার সবক গ্রহণ করে আর্থিক সমস্যার সমাধান চান। তখন তিনি মনে করেছিলেন এ রোগ কোনাদিন ভাল হবেনা, তাই আর্থিক সমস্যার সমাধান হলে মন্দ হবেনা। তারপর থেকে তিনি নিয়মিত তরিকার আমল করতে থাকেন। কিন্তু তার অসুখ এক সময় আরো বড় হতে থাকে এবং তার কষ্টে পরিবারের সবাই অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে। তার চর্ম রোগের ৯ বছর অতিবাহিত হলো। যন্ত্রনায় আর থাকতে পারছিলেন না। তখন মনে হয় তার বাচার একটাই উপায় আর তা হলাে - যদি দয়াল দরদী বাবাজান তাকে সুস্থ করে দেন । তার অগাধ বিশ্বাস ছিল - যিনি আল্লাহর বন্ধু তিনি জগতের সবকিছুই করতে পারেন।
এজন্য সে একদিন ঢাকার মতিঝিলের বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে ছুটে আসেন। এসে বাবাজানের কদমে হাত রেখে বলেন বাবা ! আমি দীর্ঘদিন যাবৎ এ অসহ্য লােগ যন্ত্রণা ভােগ করছি। আর পারছি না, এখন আপনি ছাড়া আর গতি নাই। বাবাজান মায়াভরা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলেন, কই ! দেখি কি রােগ আপনার ? আমি সাথে সাথে আমার গায়ের জামা খুলে ফেলি। দয়াল বাবাজান অপলক মায়াভরা দৃষ্টিতে আমার গায়ের পচা - গলা ক্ষতগুলাের দিকে তাকালেন। আমি তখন দেখতে পেলাম, বাবাজান তাকানাের সাথে সাথে একটা আলাের ঝলক এসে আমার সমস্ত দেহে পড়লাে। অতঃপর আমার উপর থেকে এতদিনের কষ্ট ও যন্ত্রণার বােঝা সরে গেলাে। বাবাজান বললেন, একটা জান মানত করেন। তিনি বাবাজানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাবে রহমত থেকে বের হন সম্পূর্ণ নতুন মানুষ হিসেবে। শরীরে যদিও ক্ষতগুলাে ছিল কিন্তু তার কোন যন্ত্রণা অনুভূত হচিছল না। তখন সামান্য রােগ - যন্ত্রণাও অনুভব করেননি। তার মনে হচ্ছিল, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মানুষ।
সবচেয়ে অলৌকিক বিষয় হলাে, দেওয়ানবাগী হুজুরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাবার পর থেকেই ক্ষত গুলাে শুকাতে থাকে এবং মাত্র ৮ / ৯ দিনের মাথায় দেহের চামড়া দেখে আর বােঝার উপায় থাকল না, তার কি কঠিন অবস্থা ছিল! এ ঘটনায় তার পিতা - মাতা, স্ত্রীসহ গ্রামবাসী সবাই অবাক হয়ে দয়াল বাবাজানের প্রশংসা করতে থাকেন। পরে মানত আদায় করে ঘটনা বনর্না করেন।
মহান দয়াময় আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তার প্রিয় অলি বন্ধুর ওসিলায় জাগতিক ও পারলৌকিক বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করুক, আমিন।