Translate

সোমবার, ৪ জুন, ২০১৮

সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ সহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করার প্রয়োজনীয়তা ও এই বিষয়ে ১৫টি যৌক্তিক কারণ:

★১. মুসলিম জাতি একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি।  পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে: "তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে ধরো ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।" যদি আমরা দুই দিনে ঈদ উৎসব পালন করি তবে কোরআনের এই আয়াতটি অবমাননা করা হবে।

★২. হযরত রাসূল (স:) এর জীবদ্দশায় একই দিনে সব অঞ্চলে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা হতো। কোন অঞ্চলে একদিনে আগে আবার কোন অঞ্চলে এক দিন পরে অনুষ্ঠান করা হতো না। সেই মাফিক আমাদেরকে একই দিনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে হবে।

★৩. আমরা ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব এশা ও জুমার নামাজ সৌদির আরবের সময়ের চেয়ে ৩ ঘন্টার ব্যবধানে পড়ি। অথচ শুধুমাত্র ঈদের নামাজ ২১ ঘন্টার পর আদায় করার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। যদি অন্যান্য নামাজ ৩ ঘন্টার ব্যবধানে আদায় করি তবে ঈদের নামাজও ৩ ঘন্টার ব্যবধানে পড়াই উত্তম হবে।

★৪. হযরত ওমর (আ:) এর শাসনামলে মুসলিম রাজ্যের অায়তন বৃদ্ধি পেলে তিনি ধর্মীয় অনুষ্ঠান সঠিকভাবে করার জন্য তার উপদেষ্টা কমিটির সদস্যদের নিয়ে একটি বিজ্ঞান ভিত্তিক ক্যালেন্ডার তৈরি করেন। যে ক্যালেন্ডার টি মুসলিম সমাজ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্ত প্রায় ঐ ক্যালন্ডারটি পুনরায় অনুসরণ করলে সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ করা হবে।

★৫. হাদীস শরীফে বলা হয়েছে: বিশ্বাসযোগ্য বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করা যেমন অশুদ্ধ, তেমনি সন্দেহ জনক বিষয়ে বিশ্বাস করাও অশুদ্ধ। আমরা যদি সারাবিশ্বে সাথে তাল মিলিয়ে ঈদ না করে, যদি একদিন পর ঈদ করেই শুদ্ধ মনে করি তবে হাদীস অনুসারেও ভুল হবে। এজন্য একই সাথে ঈদ করতে হবে।

★৬. আমরা এক নবীর উম্মত অথচ ঈদ করি দুই দিনে। যাহা অন্য ধর্মালম্বীদের কাছে হেয়, হাস্যকর ও লজ্জাজনক হচ্ছে। এর কারণে তাদের কাছে আমাদের নবীর মানও ক্ষুন্ন হচ্ছে। তার সম্মানের খাতিরেও একই দিনে ঈদ করা প্রয়োজন।

★৭. পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে: তিনি (আল্লাহ) সূর্যকে তেজস্কর করেছেন, চন্দ্রকে করেছেন জ্যোতির্ময় ও তার তিথিসমূহ নির্দিষ্ট করেছেন। যাতে তোমরা বৎসর গণনা ও সময় নির্ণয়ের জ্ঞান লাভ করতে পারো, আল্লাহ এসব নিরর্থক সৃষ্টি করেননি, জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্যে তিনি সমস্ত নিদর্শন বিশদভাবে বণর্না করেন। (সূরা ইউনূস আয়াত ৫)। আমাদের দেশের বর্তমান প্রচলিত ক্যালেন্ডারটি গণনা ভিত্তিক নয় বা সম্পূর্ণ বিজ্ঞান ভিত্তিক নয়। এটা দেখা ভিত্তিক। তাই এটা দ্রুত সংস্কার করে গণনা ভিত্তিক করলেই, সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ সম্ভব।

★৮. হানাফী মাজহাবের ইমাম হযরত আবু হানিফা (রহ:) সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ বা রোজা শুরু প্রসঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন: "উদয়স্থল এলাকা বা রাষ্ট্র বিবেচনার বিষয়বস্তু হবেনা। চন্দ্র উদয়ের ব্যাপারটি শুধু বিবেচ্য হবে। মাজহাবের প্রকাশ্য মত এটিই"।তার মতেও সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ করা প্রয়োজন। তার এ মতের সাথে মাজহাবে আরও ২ ইমাম একমত পোষণ করেছেন।
অন্যতম ফতোয়ার কিতাব "ফতোয়ায়ে আলমগীরিতেও ইমাম আবু হানিফার এ মতটিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। 

 ★৯. এছাড়া ফতোয়ায়ে কাজী খানে উল্লেখ করা হয়েছে, ফকিহ আবু লাইস ও সামসুল আইম্মাহুনাওয়ানী এরূপ ফতোয়া প্রদান করেন: "যদি পশ্চিম দেশীয় লোক রমজানের চাঁদ দর্শন করে, তবে পুর্ব দেশীয় লোকদের উপর রোজা রাখা ওয়াজিব হয়ে যাবে"। তার মতেও একই দিনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান করার কথাই বলা হয়েছে।

★১০. "খোলাসা" নামক আরেকটি ফতোয়ার কিতাবে বলা হয়েছে: "যারা পরে চাঁদ দেখে (১ দিন পর) তাদের ওপরও রোজা ফরজ হবে। যদি ঐ দেশীয় লোকদের চাঁদ দেখার সংবাদ নিভর্রযোগ্য সূত্রে এসে পৌছে"। সুতরাং এ মতটি দ্বারা কোথাও চাঁদ উঠার সংবাদ পেলে একই সাথে রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে।

★১১. মোজতাহেদ আল্লামা রশীদ রেজা  "তাফসীরুল মানারে" একই দিনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের পক্ষে মত দেন।

★১২. ১৯৬৯ সালে ২১-২৭ এপ্রিল মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত মুসলিম ওলামা সম্মেলনে একই দিনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়।

★১৩. ১৯৭৪ সালে আলজিরিয়ায় শিক্ষা ও ধর্ম মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে একই দিনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের জন্য একমত পোষণ করা হয়।

★১৪. ১৯৭৮ সালে ইস্তাম্বুলে একটি সেমিনারে একই দিনে ঈদ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের জন্য ২ টি কমিটি গঠন করা হয়। তারাও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন।

★১৫. একই দিনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের জন্য ১৯৯৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত ওআইসির সম্মেলনে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুরের উদ্ভাবিত অষ্টবর্ষচক্র ক্যালেন্ডারটি সারাবিশ্বে প্রচলন এর মাধ্যমে ঈদ সমস্যার সমাধানে সবাই একমত পোষণ করেন। এ ক্যালেন্ডার গণনা করে নিশ্চিত ভাবে চন্দ্র উদয়ের তারিখ বলে দেয়া সম্ভব। এ ক্যালেন্ডার টি আবিস্কারের জন্য ওআইসির সম্মেলনে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুরের ভূয়সী প্রসংসা করা হয়। এবং অচিরেই তা বাস্তবায়নের আহবান জানানো হয়।

অবশেষে বলবো আজ যদি রাসূল (স:) সোনার মদিনায় স্বশরীরে থাকতেন ও ঈদ করতেন তবে কি আমরা আজ ঈদ না করে ১/২ দিন পর ঈদ করতাম। নিশ্চয়ই তা করতাম না। নবীজির সাথে একই দিনে সারাবিশ্বে ঈদ করতাম। 

তাই আসুন মহান রাব্বুল আলামিনের প্রাথর্না জানাই তার অলিবন্ধুর উসিলায় সারাবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের মুসলিমদেরও একই দিনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করার ব্যবস্থা করে দেন। আমিন।

সহায়িকা গ্রন্থ : সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী ধর্মীয় সংস্কার ১ম খন্ড।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন