Translate

রবিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৯

হযরত রাসূল (সঃ) এর স্ত্রী হযরত জোয়ায়রিয়া (রাঃ) এর পরিচিতি


হযরত জোয়ায়রিয়া (রাঃ) - এর নাম ছিল বারারা। মহানবী (সঃ) তার নাম পরিবর্তন করে রাখেন জোয়ায়রিয়া। তার জন্ম ৬০৮ খৃষ্টাব্দে। পিতার নাম হারিস যিরার। তিনি বনি মুস্তালিকের সরদার ছিলেন। তারা কোনভাবে ইসলাম ধর্ম মেনে নিচ্ছিল না। বরং মুসলমানদের সাথে বারবার যুদ্ধ লিপ্ত হচ্ছিল। হযরত জোয়ায়রিয়া (রাঃ) - এর প্রথম বিবাহ হয় মুসাফে ইবনে সাফওয়ান মুস্তালিকার সাথে তার স্বামী মরিসী যুদ্ধে নিহত হয়। আর এ যুদ্ধ সংঘটিত হয় হিজরী পঞ্চম সালে। মতান্তরে ৬ষ্ঠ সালে। এটি বনি মুস্তালিক যুদ্ধ বলেও খ্যাত। এ যুদ্ধে জোয়ায়রিয়া বন্দি অবস্থা। গণিমতের মাল হিসেবে মুসলমানদের হস্তগত হন। তার চেহারা ছিল সুন্দর, তাই দাসী হয়ে থাকা তার কাছে ছিল লজ্জাকর। গণিমতের মাল বিলি - বণ্টনে জোয়ায়রিয়া সাবেত ইবনে কায়েসের অংশে পড়েন। তাই তিনি সাবেতের কাছে মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্তির আবেদন করেন। তিনি নয় উকিয়া সােনার বিনিময়ে তাকে মুক্তি দিতে রাজী হন। হযরত জোয়ারিয়া (রাঃ) মহানবী হযরত রাসূল (সঃ) - এর খেদমতে হাজির হয়ে আজ করেন - “ ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। আমার পিতা ইহুদী হারেস গােত্রনেতা। আমি মুসলিম মুজাহিদের হাতে বন্দী হয়ে সাবেত ইবনে কায়েসের অংশে পড়েছি। তিনি মুক্তিপণের বিনিময়ে আমাকে আজাদ করে দিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু এখন আমি মুক্তিপণ আদায় করতে অক্ষম। আমি অসহায় বিধবা নারী। আপনি দয়া করে আমাকে গ্রহণ করুন। বড় আশা করে আপনার খেদমতে হাজির হয়েছি আপনি আমাকে ফিরাবেন না। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। এইভাবে তিনি হযরত রাসূল (সঃ) - এর নিকট। ব্যাকুল হয়ে কাকুতি - মিনতি করতে লাগলেন। তখন হযরত রাসূল (সঃ) তাকে বললেন, ঠিক আছে তােমার ইচ্ছা অনুযায়ী। আমি তােমার মুক্তিপণ পরিশােধ করে তােমাকে বিয়ে করলে তা উত্তম হবে না? এতে হযরত জোয়গায়রিয়া (রাঃ) অত্যন্ত খুশি হয়ে আনন্দের সাথে সম্মতি জানালেন। নবীজী মুক্তিপণ আদায় করে তাকে বিয়ে করেন। সাহাবায়ে কেরাম এ বিবাহের সংবাদ পেয়ে পরামর্শ করে বনি মুস্তালিকের একশত পরিবারের। বন্দীদের মুক্ত করে দেন। আল্লামা মুরকানী বলেন, একশত পরিবারের বন্দী বলতে একশত জন বন্দী নয়। একশত পরিবার বন্দীর সংখ্যা ছিল সাতশত জন। তাদের মুক্তি দেয়ার কারণ তারা এখন নবীজীর নিকট আত্মীয়ে পরিণত হয়েছে। তাই তাদেরকে বন্দী করে রাখা সৌন্যতার পরিপন্থী। সাহাবায়ে কেরামের এরূপ মানবতাবােধ অবলােকন করে তারা সকলেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। হযরত রাসূল (সঃ) - এর সাথে জোয়ায়রিয়া বিনতে হারেসের বিবাহের সংবাদ তার অভিভাবকের কানে পৌছায়। বিয়ের কিছুদিন পর তার পিতা হারেস উটের পিঠে মাল - সামান বােঝাই করে জোয়ারিয়াকে মুক্ত করার জন্য মদীনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। পথিমধ্যে “ আকাকী নামক স্থানে উটগুলো চরাবার জন্য ছেড়ে দেন। উটগুলাের মধ্যে দুটি উট ছিল তার খুব পছন্দের। তাই ঐ উট দুটি পাহাড়ে লুকিয়ে রেখে মদীনায় এসে নবীজীর দরবারে হাজির হন আর আরজ করেন - আপনি আমার কন্যাকে বন্দী করে রেখেছেন। এই মুক্তিপণ নিয়ে আমার কন্যাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। এই কথা বলে হারেস মালপত্র নবীজীর খেদমতে পেশ করেন। দয়াল নবীজী তাকে জিজ্ঞাসা করেন - 'আকাকী' পাহাড়ে যে উটগুলাে লুকিয়ে রাখা হয়েছে সেগুলাে কোথায়? মহানবী হযরত রাসূল (সঃ) এর এই কথা শােনামাত্র হারেস চমকে উঠল এবং বললেন, আল্লাহর কসম! উট দুইটির কথা আল্লাহ ছাড়া আর কারও জানার কথা নয়। সাথে সাথে তিনি হযরত রাসূল (সঃ) - এর কদমে পড়ে কালেমা পাঠ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তারপর হারেস জানতে পারেন, যে কন্যার মুক্তির জন্য অনেক কষ্ট করে। সুদূর মদীনা আগমন করেছেন, তিনি তাে অনেক আগেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নবীজীর অন্তঃপুরে উম্মুল মুমেনীন এর মর্যাদা লাভ করেছেন। এতদশ্রবণে তিনি খুব খুশি হন এবং আনন্দ চিত্তে বাড়ী ফিরে যান।
হযরত জোয়ায়রিয়া (রাঃ) ৬২ বছর বয়সে ৬৭০ খৃষ্টাব্দে ওফাত লাভ করেন। তাকে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন