Translate

শনিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৯

মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে কি আমানত দিয়েছেন?


মহান আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি জগতে সাগর-মহাসাগর পাহাড়-পর্বত, গ্রহ-নক্ষত্র, সৌরজগত এবং মানুষসহ অসংখ্য প্রাণী সৃষ্টি করেছেন। মহান দয়াময় আল্লাহ তায়ালা তার এ সমগ্র সৃষ্টির মাঝে 'আশরাফুল মাখলুকাত' বা হিসেবে মানুষকেই স্থান দিয়েছেন। আর এই মানুষকেই একটি 'আমানত' দান করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা এ 'আমানত' অন্যান্য সৃষ্টিকে দিতে ইচ্ছা পোষণ করেন, কিন্তু তারা কেউ ভয়ে গ্রহণ করেনি।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেনঃ (ইন্না আরাদনাল আমানাতা আলাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়াল জিবালি ফাআবাইনা আইইয়াহ মিলনাহা ওয়া আশফাকনা মিনহা ওয়া হামালাহাল ইনসানু ইন্নাহু কানা জালু জাহুলা।)

অর্থাৎঃ "আমি আসমান, জমিন ও পর্বতমালার প্রতি এই আমানত পেশ করেছিলাম, তারা তা বহন করতে অস্বীকার করল এবং তাতে শঙ্কিত হল, কিন্তু মানুষ তা বহন ; সে কত যালিম, অজ্ঞ"। (সূরা আল্ আহযাব- অায়াত ৭২)।

মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পবিত্র এ আমানত মানুষ গ্রহণ করেছে। কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে মানুষের জন্য এ আমানত কোনটি? যার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে অজ্ঞ বলেছেন। তাফসীরকারকগণ আমানতের ব্যাখায় ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন। কেউ বলছেন আমানত হলো ঈমান, কেউ বলছেন শরীয়ত, কেউবা আবার কোরআনকে বুঝাচ্ছেন।

সমস্যা হচ্ছে, তাফসীরকারক বা আলেম সমাজ এ তিনটি মতবাদের মধ্যে যার যার পছন্দের মতবাদ নিয়ে ওয়াজ মাহফিলে বয়ান করেন। এতে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা পড়েন বিপাকে। সত্যিকার অর্থে আমানত কি ঈমান? যদি আমানত ঈমান হতো, তবে পৃথিবীতে সবাই ঈমানদার থাকতো কেউ বেইমান বা কাফের থাকতো না। তার মানে ঈমান কখনো আমানত নয়। সুতরাং এ ব্যাখ্যা সঠিক নয়।

যদি আমানত বলতে কোরআনকে বোঝানো হয় তবে জগতের সকল মানুষের কাছে কোরআন আসেনি। হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর পূর্ববর্তী কোন নবী রাসূলের উম্মত কোরআন পায়নি। কিন্ত আল্লাহ এখানে জগতের সকল মানুষের কথা বলেছেন। সুতরাং কোরআনও আমানত হতে পারে না।

আবার আমানত যদি শরীয়ত হয় তবেও সমস্যা কেননা সকল নবীর শরীয়ত এক নয়। একেক নবীর শয়ীয়ত একেক রকম। তার মানে শরীয়তও আমানত নয়।

মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলাজান বলেনঃ মূলত আমানত হচ্ছে রুহ। কেননা, মহান আল্লাহ তায়ালা এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেনঃ ওয়া নাফাকতু ফিহি মির রুহি (সূরা আল হিজর, আয়াত-১৫)। অর্থাৎঃ আমার রুহ থেকে রুহ আদমের ভিতরে ফুকে দিলাম। (সূরা হিজর আয়াত-১৫)

এখানে লক্ষনীয় যে, প্রতিটি প্রাণীর মধ্যে প্রাণ আছে। শুধুমাত্র আদম সন্তান তথা মানুষের মধ্যেই রুহু আছে। প্রাণ আর রুহ এক জিনিস নয়। প্রাণের জন্ম পিতার শুক্রকিট হতে। আর রুহ আলমে আরওয়াহ হতে আগত। প্রতিটি প্রাণীর মাঝে নফস বা প্রাণ আছে। আর মানুষের মাঝে নফস ও রুহ দুটোই আছে। আর রুহুই আল্লাহর বিশেষ দান বা আমানত। যা প্রতিটি মানুষের মাঝেই বিদ্যমান।

জাগতিক কাজ-কর্মে রুহুকে কলুষিত না করে, তাকে পাক পবিত্র অবস্থায় আল্লাহর কাছে সমর্পণ করা আমানতের উত্তম প্রতিদান হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন