Translate

রবিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৯

হযরত রাসূল (সঃ) এর স্ত্রী হযরত উম্মে হাবীবা (রাঃ) এর পরিচিতি।


হযরত উম্মে হাবীবা (রাঃ) ছিলেন মক্কার নামকরা নেতা আবু সুফিয়ানের কন্যা। তিনি ৫৮৯ খৃষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। মাতার নাম সাফিয়া বিনতে আবি আল আস। উম্মে হাবিবা (রাঃ) এর আবদুল্লাহ ইবনে জাহশের সাথে তার প্রথম বিয়ে হয়। স্বামী - স্ত্রী উভয়েই ইসলাম গ্রহণ করায় পিতা - মাতার অত্যাচারে অতীষ্ট হয়ে তারা আবিসিনিয়ায়। হিজরত করেন। আবিসিনিয়ায় অবস্থানকালে তার স্বামী আব্দুল্লাহ খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে, কিন্তু স্ত্রী উম্মে হাবীবা ইসলাম ধর্মেই থেকে যান। উম্মে হাবীবা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ না করায় স্বামী তাকে ত্যাগ করেন।হযরত রাসূল (সঃ) এ সংবাদ জানতে পেরে অত্যন্ত দুঃখিত হন। অতঃপর এই অসহায় বিধবাকে নিজেই বিয়ে করার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করে সম্রাট নাজ্জাশীকে পত্র দেন। নাজ্জাশী ইতিপূর্বে গােপনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। নাজ্জাশী তার দাসীকে দিয়ে উম্মে হাবীবার কাছে পয়গাম পাঠালেন। এতে উম্মে হাবীবা খুশি হয়ে নিজের হাতের গহনা খুলে দাসীকে উপহার দেন। আর তার নিজের মামাতো ভাইকে উকিল হিসাবে নাজ্জাশীর কাছে প্রেরণ করেন। তদানুযায়ী সম্রাট নিজ থেকে দেনমােহর বাবদ ৪০০ দীনার প্রদান করে। আবিসিনিয়াই এই শুভ বিবাহ সম্পন্ন করেন। হযরত উম্মে হাবীবকে বহু বস্ত্রালংকার দিয়ে মদীনায় পাঠিয়ে দেন। এ বিয়ে উপলক্ষে সম্রাট নাজ্জাশী নিজেই বহুলােককে দাওয়াত করে আহার করিয়েছিলেন। উম্মে হাবীবা (রাঃ) - এর সাথে মহানবী (সঃ) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পিছনে নবীজীর মানবতাবােধ , রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও মানবপ্রীতির নিদর্শন নিহিত রয়েছে।উম্মে হাবীবার পিতা আবু সুফিয়ান ছিলেন ইসলাম ও মুসলমানদের চরম শত্রু। তার কন্যাকে বিয়ে করে মানবপ্রীতির আদর্শ স্থাপন করেন। হযরত রাসূল (সঃ) - এর সাথে কুরায়শদের বিরােধ শুধু আদর্শের।অন্যথায় তাদেরকেও যে তিনি ভালবাসতেন এ বিবাহই তার প্রকৃত প্রমাণ। এ বিবাহের পর আবু সুফিয়ানের মনের গ্লানি ও বিকার অনেকাংশে হ্রাস পায়। হযরত রাসূল (সঃ) এখন তার মেয়ের জামাতা নবীজী প্রেম দ্বারাই আবু সুফিয়ানের চিত্ত জয় করে নিলেন। কুরায়শদের নেতা আবু সুফিয়ান ও কুরায়শরা সুদীর্ঘ ২১ বছর ধরে মুসলমানদের উপর নানাভাবে জুলুম চালিয়েছে। তারা তিনবার মদিনা আক্রমণ করে মােহাম্মদী ইসলাম নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে। তারা সন্ধির চুক্তি ভঙ্গ করেছে। বারবার মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। উম্মুল মুমেনীন হযরত উম্মে হাবীবা (রাঃ) ছিলেন ইসলামের প্রতি অটল অবিচল। তার ঈমানের দৃঢ়তা ছিল প্রবল। সত্য ও ন্যায়ের কথা বলতে তিনি একটু দ্বিধাবােধ করতেন না। মক্কার কুরায়শগণ হুদাইবিয়ার সন্ধিশর্ত ভঙ্গ করে অন্যায়ভাবে বনি বকরকে সাহায্য করে। পরে কুরায়শদের টনক নড়ে যে, এতে সন্ধি বাতিল ঘোষিত হলে তাদেরই ক্ষতি হতে পারে। তাই তারা সন্ধি পুনর্বহাল ও সন্ধির মেয়াদ বৃদ্ধির উদ্দেশে আবু সুফিয়ানকে মদীনায় নবীজীর দরবারে প্রেরণ করেন যেহেতু আবু সুফিয়ান কুরায়শদের অন্যতম নেতা। অন্যদিকে তিনি এখন মহানবী (সঃ) - এর নিকটতম আত্মীয়ও বটে। আবু সুফিয়ান মদীনা পৌছে স্বীয় কন্যা উম্মে হাবীবার গৃহে সর্বপ্রথম যান। গৃহে প্রবেশ করে আবু সুফিয়ান নবীজীর বিছানায় বসতে চাইলে উম্মে হাবীবা বিছানা টান দিয়ে নিয়ে গুটিয়ে ফেলেন। আবু সুফিয়ান বিস্ময়ের সুরে জিজ্ঞেস করেন - ভাল বিছানা বিছিয়ে দেয়ার জন্য, নাকি আমার প্রতি অবজ্ঞা করে তুমি বিছানা গুটিয়েছ? উম্মে হাবীবা (রাঃ) তেজোদীপ্ত কণ্ঠে বললেন, আপনি হচ্ছেন মুশরিক ও অপবিত্র; মুশরিকের জন্য রাসূল পাকের বিছানায় বসা উচিত নয়। তাই আমি বিছানাটি গুটিয়ে ফেলেছি। আবু সুফিয়ান হতভম্ব হয়ে বললেন, আমা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তুমি একেবারে বিগড়ে গিয়েছ দেখছি। উম্মে হাবীবা (রাঃ) বললেন, পিতা! মহান আল্লাহ আমাকে ঈমান আনার তৌফিক দিয়েছেন, আপনি তাে সমাজের একজন নেতা, বিবেক - বুদ্ধি আছে বলে দাবী করেন, ইসলাম থেকে দূরে সরে প্রতিমা পূজা করেছেন। এটা তাে বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করি না। আবু সুফিয়ান বলেন, তুমি আমাকে বাপ - দাদার ধর্ম পরিত্যাগ করার কথা ।বলে অপমান করছ। অতঃপর আবু সুফিয়ান ব্যথিত হয়ে ব্যর্থ চিত্তে সেখান থেকে বের হয়ে আসেন। পরবর্তীকালে আবু সুফিয়ান অন্যান্য কুরাইশদেরকে নিয়ে নবীজীর বশ্যতা স্বীকার করে মুসলমান হয়ে যায়।
হযরত উম্মে হাবিবা (রাঃ) ৬৬৬ খৃঃ মারা যান।

২টি মন্তব্য:

  1. জাজাকাল্লাহ,,,খাইরান,,,আল্লাহ তায়লা আপনাকে ইসলামের আরো বেশি বেশি খেদমত করার তাওফিক দান করুন,,,আমিন

    উত্তরমুছুন